Digital Trust, Sales

ডিজিটাল যুগে কিভাবে গ্রাহকদের আস্থা অর্জন করা যেতে পারে?

গল্প ০১: ডিজিটাল বিশ্বাস

সজীব হোসেন, বাংলাদেশের তরুণ উদ্যোক্তা, প্রযুক্তির এই যুগে মানুষের আস্থা অর্জনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে নিজের পথচলা শুরু করেন। তার স্বপ্ন ছিল এমন একটি ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা, যেখানে মানুষ নিশ্চিন্তে কেনাকাটা করতে পারবে। তবে একের পর এক নতুন স্টার্টআপ আসা-যাওয়ার এই সময়ে কেবল প্রযুক্তি দিয়ে গ্রাহকদের মন জয় করা খুব সহজ ছিল না।

সজীব যখন প্রথম তার উদ্যোগ, “বিশ্বাসমার্ট”, চালু করেন, তখন তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে মানুষের আস্থা অর্জন করাটা কেবল ভালো পণ্য বা দ্রুত ডেলিভারির বিষয় নয়। এটি আরও বেশি কিছু—বিশ্বাসের প্রশ্ন। বাংলাদেশের অনেক মানুষই অনলাইন কেনাকাটার সময় প্রতারণার শিকার হয়েছে। তাই সজীবের প্রথম লক্ষ্য ছিল গ্রাহকদের মনে বিশ্বাস প্রতিষ্ঠা করা।

বিশ্বাসের প্রথম ধাপ: সরাসরি যোগাযোগ

সজীব সিদ্ধান্ত নিলেন, যেকোনো ক্রেতার সমস্যার সমাধান দ্রুত এবং সরাসরি দেবেন। তিনি তার ওয়েবসাইটে লাইভ চ্যাট ফিচার চালু করলেন এবং একটি কল সেন্টার স্থাপন করলেন, যেখানে প্রতিটি গ্রাহকের প্রশ্ন বা অভিযোগের উত্তর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দেওয়া হবে।

“আমাদের প্রতিশ্রুতি শুধু পণ্য বিক্রি করা নয়, প্রতিটি সমস্যার সমাধান করা,” সজীব তার টিমকে বলতেন। একজন ক্রেতা যখন ফোন করত বা মেসেজ পাঠাত, তারা অনুভব করত যে সজীবের টিম সত্যিই তাদের সাহায্য করতে আগ্রহী।

গ্রাহকদের সামনে পুরোপুরি স্বচ্ছ থাকা

বাংলাদেশে ই-কমার্স নিয়ে গ্রাহকদের সন্দেহের অন্যতম বড় কারণ ছিল ডেলিভারি ও পণ্যের গুণগত মান নিয়ে অস্বচ্ছতা। সজীবের টিম প্রতিশ্রুতি দেয়, পণ্য যেভাবে ছবি এবং বিবরণে দেখানো হবে, ঠিক সেইরকমই ক্রেতারা হাতে পাবেন।

তিনি ওয়েবসাইটে পণ্য ডেলিভারি ট্র্যাকিং সিস্টেম চালু করলেন, যাতে ক্রেতারা দেখতে পারে তাদের অর্ডার কোথায় রয়েছে। প্রতিটি ধাপে ক্রেতাদের কাছে আপডেট পাঠানো হতো—অর্ডার কনফার্মেশন থেকে শুরু করে পণ্য হাতে পৌঁছানো পর্যন্ত।পেমেন্ট চেকিং সিস্টেম ও চালু করলেন যাতে তার  কাস্টমার পেমেন্ট করার পর পেইড মানি রিসিট পায়।

এছাড়া, ক্রেতারা যদি কোনো কারণে পণ্য ফেরত দিতে চাইত, তবে সম্পূর্ণ রিফান্ডের গ্যারান্টি দেওয়া হয়। প্রথমে এই নীতি ব্যবসার জন্য একটু কঠিন ছিল, কিন্তু সজীব জানতেন, আস্থা অর্জনের জন্য কিছু ঝুঁকি নেওয়া জরুরি।

গ্রাহকদের মতামতকে প্রাধান্য দেওয়া

সজীবের আরেকটি বড় কৌশল ছিল গ্রাহকদের মতামতকে প্রাধান্য দেওয়া। প্রতিটি অর্ডারের শেষে ক্রেতাদের কাছ থেকে ফিডব্যাক নেওয়া হতো এবং সেই ফিডব্যাক ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হতো—চাই তা ইতিবাচক হোক বা নেতিবাচক।

একদিন এক ক্রেতা একটি শাড়ি অর্ডার করেছিলেন, কিন্তু ডেলিভারি দেওয়া শাড়িটির রং ছবির চেয়ে কিছুটা ফ্যাকাশে ছিল। তিনি রেগে গিয়ে অভিযোগ জানালেন। সজীব নিজে ফোন করে ক্ষমা চান এবং তার জন্য বিনামূল্যে আরেকটি শাড়ি পাঠান। ওই ক্রেতা এতটাই মুগ্ধ হন যে তিনি পরবর্তীতে আরও পাঁচজনকে “বিশ্বাসমার্ট” থেকে কেনাকাটা করার জন্য উৎসাহিত করেন।

সামাজিক উদ্যোগ ও কমিউনিটি গড়া

সজীব জানতেন, মানুষের আস্থা অর্জন শুধু ব্যবসায়িক লেনদেনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তিনি তার প্রতিষ্ঠানের লাভের একটি অংশ দান করতেন সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষায়। এছাড়া, পণ্য বিক্রির সময় স্থানীয় হস্তশিল্পীদের তৈরি পণ্যকেও প্রাধান্য দিতেন।

“আপনার প্রতিটি কেনাকাটার মাধ্যমে আপনি আমাদের সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন,”—এই স্লোগানটি খুব দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ক্রেতারা শুধু পণ্য কেনার জন্যই নয়, একটি বৃহত্তর উদ্দেশ্যের সঙ্গে যুক্ত থাকার জন্যও “বিশ্বাসমার্ট” বেছে নিতে শুরু করে।

সাফল্যের ফলাফল

দুই বছরের মধ্যেই “বিশ্বাসমার্ট” ই-কমার্স জগতে একটি পরিচিত নাম হয়ে ওঠে। অনেক প্রতিযোগী থাকলেও সজীবের প্ল্যাটফর্মে মানুষ আস্থা রাখতে শুরু করে, কারণ তারা জানত, এখানে প্রতিশ্রুতি মানে সত্যিকারের দায়বদ্ধতা।

একটি গ্রাহক একবার সজীবকে মেসেজে লিখেছিলেন, “আপনাদের সার্ভিস দেখে মনে হয় যেন বন্ধুর কাছ থেকে কেনাকাটা করছি।” এই কথাগুলোই সজীবের জন্য সবচেয়ে বড় পুরস্কার ছিল।

সজীব হোসেনের এই গল্প প্রমাণ করে, ডিজিটাল যুগে আস্থা অর্জন করতে হলে প্রযুক্তির পাশাপাশি মানুষের অনুভূতিকে গুরুত্ব দিতে হয়। দ্রুত সার্ভিস, স্বচ্ছতা, গ্রাহকদের মতামতকে সম্মান, এবং সামাজিক উদ্যোগের মাধ্যমে তিনি শুধু একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানই গড়ে তুলেননি, বরং একটি বিশ্বাসের সেতুও তৈরি করেছিলেন।

এখন সজীবের প্রতিষ্ঠান শুধু ব্যবসা নয়, আস্থার আরেক নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে। ডিজিটাল যুগে যেখানে প্রতিযোগিতা তীব্র, সেখানে আস্থার এই শক্তিই তাকে টিকিয়ে রেখেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *